তামিম ইকবাল - ছবি : ইন্টারনেট

তামিমের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি

তামিম ইকবাল – ছবি : ইন্টারনেট

ছোট মাঠ, ফুরফুরে বাতাস; গেইলরা না জানি কেমন টর্নেডো বইয়ে দেন। অজানা শঙ্কা ভর করেছিল টাইগার ভক্তদের হূদয়ে। কিন্তু নয়নাভিরাম ওয়ার্নার পার্কে দেখা মিলল দৃষ্টিনন্দন ক্রিকেটের। মানসিক চাপ উতরে পেশাদারিত্বের বহিঃপ্রকাশ। তীরে এসে তরী ডোবার প্রবচন এবার উল্টে গেল মাশরাফিদের ধামাকায়। তামিমের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি, রিয়াদের ঝকমকে অপরাজিত ইনিংস, মাশরাফির ছোট্ট ঝড়। ৩০১ রানের রেকর্ড গড়া স্কোরে বীরত্বমাখা জয়।

এমন স্কোরেও বাংলাদেশ জিতবে, জোর গলায় প্রথম দিকে বলা যায়নি। কারণ মারকুটে ব্যাটসম্যানের অভাব নেই উইন্ডিজ শিবিরেও। তবে স্বস্তির শুরু ৭৩ রানে যখন গেইল ফিরলেন। ২ ওভারে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ৩৪, তখনো পেন্ডুলামের মতো দুলছে ম্যাচ। ৪৯তম ওভারে বল হাতে আসলেন রুবেল, তিক্ত স্মৃতি ভেসে উঠল। কারণ এমন ডেথ ওভারে দলকে ডোবানোর বহু নজির আছে তার। কিন্তু চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় সেই রুবেল ছয় বলে দিলেন গুনে গুনে ছয়টি রান। সুনিশ্চিত জয়ের আলো যেন ফুটল তখনই। কিন্তু শেষ ওভারে মোস্তাফিজের প্রথম বলে পাওয়েল যখন সপাটে ছক্কা হাঁকালেন, নড়েচড়ে বসা ছাড়া উপায় ছিল না। তবে শেষটা স্বস্তি আর গৌরবেরই। ১ বলে যখন ২০ রান দরকার, মোস্তাফিজের করা সেই বল রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে ঠেকিয়ে দিলেন নার্স। ঠিক যেন আত্মসমর্পণ ঢঙে। ১৮ রানের সুখকর এক জয়। শূন্যে ঘুসি ছুড়ে মাশরাফির ক্ষেপাটে উদযাপন। টাইগার শিবিরে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের মহোৎসব (২-১)।

অথচ এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেই টেস্টে হোয়াইটওয়াশ (২-০)। কিন্তু সাদার বদলে রঙিন জার্সি আর মাশরাফির উপস্থিতিতে বদলে গেল ওয়ানডে সিরিজের দৃশ্যপট। ২০০৯ সালের পর দেশের বাইরে প্রথম সিরিজ জয় বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তৃতীয়, দেশের বাইরে পঞ্চম সিরিজ জয়। তাও কত রেকর্ড গড়ে। প্রথম ম্যাচে ৪৮ রানের জয়। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ রানের আফসোসের হার। গায়ানার শেষ দুঃখের স্মৃতি মুছে সেন্ট কিটসে ঝলমলে মাশরাফি-ব্রিগেড। ৩০১ রানের স্কোর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে যা সর্বোচ্চ, আগেরটি ২৭৯ রান, প্রথম ম্যাচেই।

ওয়ানডে সিরিজে তামিম-সাকিবের জুটি ছিল সবচেয়ে নজরকাড়া। তিন ম্যাচে দুজনের জুটিতে যোগ হয়েছে মোট ৩৮৫ রান। ওয়ানডে সিরিজে যা বাংলাদেশের যেকোনো জুটির সর্বোচ্চ অবদান। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে নির্দিষ্ট কোনো জুটির সর্বোচ্চসংখ্যক রানও। অলিখিত ফাইনালে ম্যাচসেরা তামিম, সিরিজসেরাও। ব্যাট হাতে অসাধারণ নৈপুণ্য। ১৩০*, ৫৪ ও ১০৩, তিন ম্যাচে রান ২৮৭, নতুন রেকর্ড। তিন ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সফরকারী দলের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এর আগে ছিল ড্যারেন লেহম্যানের (২০৫)।

ব্যাটে রানের ফোয়ারা, সঙ্গে দলের সিরিজ জয়। স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত তামিম, ‘এটা অনেক প্রশান্তির। অনেক দিন পর একটা সিরিজ জিতলাম (দুই বছর পর)। টেস্টে খারাপ খেলার পর প্রথম ম্যাচে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। দ্বিতীয় ম্যাচটা জেতা উচিত ছিল। হয়নি। এই ম্যাচটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সবাই বিশ্বাস করেছে, আমরা জিততে পারি। সিরিজটা আমাদের অনেক বড় সাফল্য।’

মাশরাফির মতে, সিরিজ জয়টা খুবই দরকার ছিল। টাইগার দলপতির মতে, ‘যদি গত ৩-৪ মাসের পারফরম্যান্স দেখেন, এই সিরিজ জয়টা আমাদের জন্য খুব দরকার ছিল। এটা অবশ্যই এশিয়া কাপের আগে আমাদের জন্য ভালো হলো। তবে কিছু জায়গায় আমি মনে করি এখনো অনেক উন্নতি করতে হবে।’

ডেথ ওভারে রুবেল অনেক খরুচে। কিন্তু এবার ভিন্ন। উন্নতির রেখাটা তাই চোখে পড়েছে ক্যাপ্টেনের- ‘আজকে আমরা যেটা চাই, রুবেল একদম সেটি করতে পেরেছে। এ রকম কিছু জায়গা আছে যেগুলোয় ধারাবাহিক হতে হবে।’

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতেই হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল প্রথমবারের মতো ক্যারিবীয় দ্বীপে প্রথম সিরিজ জয়ের স্মৃতি। অধিনায়ক হিসেবে ছিলেন মাশরাফি। কিন্তু টেস্ট সিরিজে এক চোটে মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। ওয়ানডে সিরিজে নেতৃত্ব দেন সাকিব। ৯ বছর পর সেই অপূর্ণতা যেন ঘোচালেন মাশরাফি তার জাদুর কাঠির স্পর্শে।

জাদুই যেন। টেস্টে হাঁসফাঁস করা দল মাশরাফিতেই জেগে উঠল ওয়ানডেতে। দক্ষ নেতৃত্ব, সঙ্গে বল হাতে সর্বোচ্চ উইকেট (৭)। আবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ২৫ বলে ৩৬ রানের ইনিংসটাও যে চোখে পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে।

তবে আফসোস। ১ আগস্ট থেকে শুরু হবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। প্রথম ম্যাচ সেন্ট কিটসে, বাকি দুটি মার্কিন মুলুকের ফ্লোরিডায়। সংক্ষিপ্ত এই ভার্সনের ক্রিকেটে খেলা হবে না মাশরাফির। অভিমানে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলা নড়াইল এক্সপ্রেসকে খুবই মিস করবে সাকিব বাহিনী, তা বলাই বাহুল্য।

আরো খবর ➔
৯ বছর পর মাশরাফিদের অপেক্ষার অবসান