দুই তারকা তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং নৈপুণ্যে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। শনিবার রাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিততে সক্ষম হয় মাশরাফি ব্রিগেড। ৯ বছর পর এটি বিদেশের মাটিতে প্রথম কোনো ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ৩০১ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ ওভারে করে ৬ উইকেটে ২৮৩ রান।
এর আগে ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের মাটিতে ৪-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয় করে বাংলাদেশ, যা ছিল বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সবশেষ ওয়ানডে সিরিজ লাভ।
৩০২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ক্রিস গেইল, শাই হোপ ও রোভম্যান পাওয়েল তিনজন হাফসেঞ্চুরি করেন। তাতেও কাজের কাজ হয়নি। এভিন লুইস ও গেইলের উদ্বোধনী জুটি ৫৩ রানে ভেঙে যায়। মাশরাফির বলে লুইস আউট হন ৩৩ বল থেকে মাত্র ১৩ রান করে। এরপর গেইল-হোপের জুটি ভাঙে ১০৫ রানে। এ সময় গেইল আউট হন রুবেলের বলে। ৬৬ বলে ছয়টি চার ও পাঁচটি ছয়ে গেইল করেন ৭৩ রান।
এরপর হেটমেয়ার-হোপের জুটি দলকে নিয়ে যায় ১৭২ রান পর্যন্ত। ৩০ রান করা হেটমেয়ার এ সময় মাশরাফির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। এর পর পরই কাইরন পাওয়েল রান আউট হয়ে যান। পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রোভম্যান পাওয়েল ও শাই হোপ দুর্দান্ত ব্যাট করলেও মূল লক্ষ্যে দলকে নিয়ে যেতে পারেননি। ৯৪ বল থেকে ৫টি চারের মারে ৬৪ রান করেন হোপ। আর পাওয়েল ৪১ বল থেকে পাঁচটি চার ও চারটি ছয়ে ৭৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মাশরাফি ২টি উইকেট দখল করেন। আর রুবেল, মিরাজ ও মোস্তাফিজ ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে তামিম ও মাহমুদউল্লাহর চমৎকার ব্যাটিংয়ে ৩০০ রান অতিক্রম করে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি করেছেন তামিম এবং আর ৪৯ বলে ৬৭ রানের হার না মানা এক ইনিংস খেলেছেন রিয়াদ। তামিম ও এনামুল বাংলাদেশের ইনিংসের সূচনা করতে নেমে বেশিদূর যেতে পারেননি। দশম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ৩৫ রানের সময় আউট হয়ে যান এনামুল। হোল্ডারের বলে আউট হওয়ার আগে ৩১ বল থেকে মাত্র ১০ রান করেছেন তিনি। এরপর তামিম-সাকিব জুটি বাঁধেন। দ্বিতীয় উইকেটে এ দুজন যোগ করেন ৮১ রান। তবে হতাশ করেন সাকিব। দলীয় ১১৬ রানে নার্সের বলে পলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে। আউট হওয়ার আগে ৪৪ বল থেকে ৩টি চারের মারে সাকিব করেছেন ৩৭ রান। সাকিব আউট হওয়ার পর তামিমের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মুশফিকুর রহিম। দুজন তৃতীয় উইকেটে ৩৬ রান যোগ করেন। ১২ রান করে মুশফিক আউট হয়ে যান। পরে তামিমের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে জুটি বাঁধেন মাহমুদউল্লাহ। তিনজন সঙ্গী একপাশ থেকে বিদায় নিলেও সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ১৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন। এরপর দ্বিতীয়টিতে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় তৃতীয় ম্যাচেও সেঞ্চুরি করলেন এই ড্যাশিং ওপেনার। ১২৪ বল থেকে ৭টি চার ও ২টি ছয়ে তামিম করেন ১০৩ রান। এটি ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তামিমের ১১তম সেঞ্চুরি। তামিম যখন আউট হন তখন ৩৮.৫ ওভারে বাংলাদেশের দলীয় স্কোর ২০০ রান।
এরপর পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি বাঁধেন মাশরাফি। পঞ্চম উইকেটে এই দুজন করেন আরো ৫৩ রান। দলীয় ২৫৩ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন মাশরাফি। আউট হওয়ার আগে ২৫ বল থেকে ৪টি চার ও ১টি ছয়ে মাশরাফি করেন ৩৬ রান। এরপর ৯ বল থেকে ১২ রান করে আউট হন সাব্বির। সবশেষ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে ৩০১ রান সংগ্রহ করে মাঠ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। ৪৯ বল থেকে ৫টি চার ও ৩টি ছয়ে ৬৭ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। সৈকত অপরাজিত থাকেন ৫ বল থেকে ১১ রান নিয়ে। ক্যারিবীয় বোলারদের মধ্যে অ্যাশলে নার্স ও জেসন হোল্ডার ২টি করে উইকেট নেন।
চলতি সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। এখন বাংলাদেশ দল স্বাগতিকদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে। আগামী ১ আগস্ট থেকে শুরু হবে এই সিরিজ।