ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

সমঝোতার সময় ফুরিয়ে আসছে

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য। সম্প্রতি পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের ভূমিকা, বিএনপির অবস্থান ও আগামীর কর্মপন্থা, জাতিসংঘসহ বিদেশীদের উদ্বেগ, জনগণের ভাবনা, গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ ও শঙ্কা নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে আলাপ করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান হেলাল
রাজনৈতিক সংকট সমাধানে মধ্যস্থতার জন্য তৃতীয় পক্ষের কথা ভাবছেন কি?
মধ্যস্থতা বা সমঝোতার জন্য জাতিসংঘ একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘের পক্ষে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেলের নেতৃত্বে একটি দল ঢাকায় এসেছিল। তারা প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের মতামত, আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হোক। এ সমঝোতায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেই পৌঁছতে হবে। এ ব্যাপারেই তারা মূলত জোর দিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের প্রধানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। জাতিসংঘ বিশ্বশান্তি রক্ষায় কাজ করে। তাদের এমন উপলব্ধি হয়েছে বা তথ্য রয়েছে যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে না হলে বাংলাদেশে বড় ধরনের সহিংসতা বা অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে। সেই উপলব্ধি, উদ্বেগ থেকে জাতিসংঘের মহাসচিব নিজে কথা বলেছেন দুই নেতার সঙ্গে। তার কথা মূল্যায়নের মূল দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু তার কথাকে আমলে নিচ্ছে না তারা। জাতিসংঘ, জনগণ, বিরোধী দল— কারো উদ্বেগকেই তারা আমলে নিচ্ছে না। এতে আওয়ামী লীগ একা হয়ে যাচ্ছে। একতরফা নির্বাচনের ঝুঁকি সরকারকেই নিতে হবে। আমরা কেবল এ বিষয়টি মনে করিয়ে দিতে পারি। জাতিসংঘের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফরে এলে আমাদের নেতা সবার সামনেই বলেছেন— সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কায়েমের উদ্যোগ নিলে বিরোধী দল আলোচনায় প্রস্তুত রয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনসম্মুখে ঘোষণা করেছিলেন আমাদের চিঠি দেবেন। কিন্তু সে চিঠির কোনো নাম-গন্ধ নেই।
জাতিসংঘের উদ্যোগ সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
জাতিসংঘ শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে। এটাই তাদের দায়িত্ব। সমঝোতার জন্য বিরোধী দল তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। সেখানেই আমরা থাকব। জাতিসংঘের কাছে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে, এ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। বহু উদাহরণ দিয়ে আমরা বলেছি, কেন আমরা নির্বাচনে যাব না। আমাদের এখানে বাস্তবতা ভিন্ন। যারা নির্বাচন আয়োজন করে, তারা সবাই সরকারি কর্মকর্তা। তারা নানা কারণে নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। জাতিসংঘ এ যুক্তি মেনেই সরকারকে বারবার বলছে, যেন সবার অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন হয়। আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না বা যে নির্বাচনে পক্ষপাত হওয়ার শঙ্কা অত্যধিক, সেখানে কেন যাব? কেবল জাতিসংঘ নয়, ইউরোপ, আমেরিকা সবাই আমাদের দাবি বুঝতে পেরেছে বলেই বলছে— নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে হতে হবে। যদি এমন একটি সমঝোতায় আসা যায়, যেখানে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না; তাহলে নিশ্চয় আমরা তাতে অংশ নেব।
তাহলে কী জাতিসংঘের মধ্যস্থতার ওপরই নির্ভর করছে বিএনপি?
আমরা কোনো কিছুর ওপর নির্ভর করছি না। আমরা নির্ভর করতে চাই সরকারের ওপর। বিদেশীরা আমাদের সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না, তারা কেবল চেষ্টা করতে পারে। তাদের চেষ্টা আমাদের দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে। তবে এখনো মনে করি, বাইরে থেকে এসে তারা আমাদের সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। সরকার আন্তরিক হলে আগামী নির্বাচনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করতে বিরোধী দলকে এক টেবিলে বসার আমন্ত্রণ জানাবে। হয়তোবা এর জন্য সংবিধান সংশোধনেরও প্রয়োজন হতে পারে। এসব করতে হবে সরকারকেই, বিরোধী দল এক্ষেত্রে কিছু করতে পারবে না। আমরা শুধু তাতে সাড়া দেব। এজন্য সরকারের আন্তরিকতার ওপর আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। সরকার যদি মনে করে একতরফা নির্বাচন করবে, সেক্ষেত্রে আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নেব না এবং ওই নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করব। এক্ষেত্রে বিরোধী দল হিসেবে যতটা সদিচ্ছা দেখানোর দরকার, ততটা আমরা দেখিয়েছি। কিন্তু সরকার একগুঁয়েমি করছে। ক্ষমতার লোভে সরকার অন্ধ হয়ে গেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
শেষ মুহূর্তে যদি আপনাদের আলোচনার জন্য ডাকা হয়, তবে কী করবেন?
‘শেষ মুহূর্ত’ কখন হবে, এটা নির্ভর করে সংবিধান অনুযায়ী সংসদের সময়কালের ওপর। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর আলোচনার উদ্যোগ নিলে সমাধান পাওয়া কঠিন হবে। কারণ তখন সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদ থাকবে না। সেজন্য বারবার বলছি, সমঝোতার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। ফলে কোনো সমঝোতায় উপনীত হতে হলে সংসদ ভেঙে যাওয়ার আগেই আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। যদি আলোচনার মাধ্যমে এমন সমঝোতায় পৌঁছানো হয়, যেখানে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংসদ না থাকলে তখন কী করা হবে? সংসদের সময়কাল শেষ হয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রী যত উদ্যোগই নেন না কেন, তার ওপর আস্থা রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে সংসদ ভেঙ্গে আগেই সমঝোতায় উপনীত হতে হবে। নভেম্বর, ডিসেম্বরে আলোচনার জন্য ডাকলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। সমঝোতার প্রথম ইস্যু হচ্ছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিরোধী দল। সংসদ বহাল রেখে আরেকটি নির্বাচন— এমন উদাহরণ বিশ্বে আর কোথাও নেই। যুক্তরাষ্ট্রে সিনেট কার্যকর থাকা অবস্থায় নির্বাচন হলেও তাতে প্রভাব খাটানোর উপায় থাকে না তাদের। আমাদের নির্বাচন কমিশন খুবই দুর্বল। পর্যাপ্ত লোকবল নেই তাদের। তারা নির্ভর করে প্রশাসনের ওপর। আর প্রশাসন সরকারের কথা শুনতে বাধ্য। এ কারণেই ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস, আস্থা, দূরত্ব বেড়েছে। সংবিধানের অজুহাত দেখানো হচ্ছে। আমরাও তো সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন চাই। আমাদের দাবি ছিল, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষভাবে করার জন্য সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হোক। এখনো সময় রয়েছে। চলতি সংসদ অধিবেশনেই সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে। সংবিধানের বাইরে তো নির্বাচন হয় না। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছিল। এ সরকার সেটা বাতিল করেছে। আওয়ামী লীগ বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে না। আমরা বলছি, যে নামেই হোক না কেন, এটি আনা হোক। প্রধানমন্ত্রী বা সরকার না থেকে নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হলেও সংসদের প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণেই বলা হচ্ছে, সংসদের সময় ফুরিয়ে গেলে যত ভালো উদ্যোগ নেয়া হোক না কেন, তা বাস্তবায়ন অসম্ভব ও কঠিন হয়ে পড়বে। সেসময় আমাদেরকে আলোচনার প্রস্তাব দিলে তা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখব। প্রশ্ন করা হবে— যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে সময় থাকতে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়নি কেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ অধিবেশনের পর আর কোনো সংসদ অধিবেশন হবে না। তাহলে কী বোঝা গেল? এ অধিবেশনই শেষ সময়। সরকার যদি কিছু করতে চায়, এ অধিবেশনেই করতে হবে। বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার বলছে, বিরোধী দল সংসদে এসে প্রস্তাব দিক। সংসদে প্রস্তাব দেয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। সংসদে প্রস্তাব দিতে হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। মুখে মুখে দেয়া যায় না। যখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেয়া হবে, তখন হয় এটি গ্রহণ করা হবে নতুবা প্রত্যাখ্যান। সংসদে প্রস্তাব উঠলে স্বাভাবিকভাবে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে। সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য সরকারদলীয় হওয়ায় এ প্রস্তাব বাতিল হয়ে যাবে। ফলে প্রস্তাব দিলে কী হবে? কণ্ঠভোটে তা প্রত্যাখ্যান হবে। এটি কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে গেলে এ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। আমরা বলেছি, এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি যাবে না। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে না, সেটি গ্রহণযোগ্যও হবে না। তাতে সংকট নিরসন হবে না। সংসদে গিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তাব দেয়া অর্থহীন। এতে সংকট আরো ঘনীভূত হবে। তখন সরকার বলবে, সংসদেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেছে। উচ্চ আদালতও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দুটি নির্বাচন করার পরামর্শ দিয়েছিল। তারা সেটাও মানেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তারা সুবিধা করতে পারবে না জেনে বিষয়টি আমলে নেয়নি। সংসদে প্রস্তাব পাস হবে না জেনেও বিএনপি কেন সরকারের ফাঁদে পা দেবে?
সরকার কোনোক্রমেই নমনীয় হচ্ছে না। সরকারকে তো ন্যূনতম রাজি হতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা, কাঠামো কেমন হবে, সেটি নিয়ে বর্তমান সরকার যদি আলোচনা করতে চায়; তাহলে বিরোধী দলের কোনো আপত্তি নেই। সরকার নিজস্ব পরিকল্পনায় পুনরায় ক্ষমতায় আসার চিন্তা করছে কিনা, তা পরিষ্কার হবে এ সংসদ অধিবেশনেই। সে অনুযায়ী বিএনপি আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করবে।
ঈদুল আজহার পর কি দেশের জন্য খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে?
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হওয়ার পর থেকেই আমরা এটি বলে আসছি। নির্বাচন অনিশ্চিত হলে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়লে দেশে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করবে। অস্থিতিশীলতা সংঘাতে রূপ নিতে পারে। দেশ অন্ধকারে যাচ্ছে। এটি আগেও বলেছি, এখনো বলছি। সে পরিস্থিতি কেমন হবে, তা বিএনপিও জানে না। এটি নির্ভর করে নেতাকর্মী, জনগণ ও অন্যান্য শক্তির ওপর। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই হতে পারে। এর জন্য দায়ী থাকবে সরকার। আমরা গণতান্ত্রিক দল হিসেবে শেষ সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছি।
আপনাদের কঠোর কর্মসূচি কি হরতাল-অবরাধ এসবের মধ্যেই থাকবে?
কর্মসূচির ব্যাপারে আগে থেকেই কিছু বিস্তারিত বলা যায় না। দেশে অতীতেও আন্দোলন হয়েছে। সেটি একপর্যায়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছে। সেসব আন্দোলনের কথা আগে থেকে কেউ বলতে পারেনি। নিয়মতান্ত্রিকভাবে যত আন্দোলন করা যায়, সবই আমরা করব। এগুলো কোন সময়ে কোন দিকে মোড় নেবে, তা আগে থেকে বলা যায় না। স্বৈরাচার এরশাদ হটাও আন্দোলন নিয়মতান্ত্রিকভাবেই হচ্ছিল। ডা. মিলন হত্যার পর সেই আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। কোনো রাজনৈতিক দল আগে থেকে সেটি হিসাব করে রাখেনি। ছাত্র অবস্থায় আইয়ুববিরোধী আন্দোলন করেছি। সেটাও স্বাভাবিক আন্দোলন ছিল। কিন্তু যখন আসাদ হত্যাকাণ্ড হলো, তখনই আন্দোলন অন্যদিকে মোড় নিল, স্ফূলঙ্গ ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। বিরোধী দল হিসেবে গণকের মতো বলতে চাই না, সামনে কী হবে আর কি না হবে। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিই দেয়া হবে। উচ্চ আদালত বলেছেন, হরতাল দেয়া রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। ফলে প্রয়োজনে হরতাল দেব। হরতালকে কেন্দ্র করে আন্দোলন কোন দিকে চলে যায়, সেটা আগে থেকে বলা যায় না। হরতাল, অবরোধ, মানববন্ধন, অনশন, মিছিল-সমাবেশ— এগুলোই আমাদের দেশের আন্দোলনের কর্মসূচি। এ ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বারবার গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটাও বলা যাবে না আমরা গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি করব। এটা সরকারের ওপর নির্ভর করে। সরকার ও বিরোধী দল মুখোমুখি হলে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা কীভাবে হবে?
এর একটা কাঠামো ঠিক করতে হবে প্রথমে। যেমন সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছেন, প্রধান বিচারপতি বা সাবেক বিচারপতিদের প্রধান উপদেষ্টা করা যাবে না। এ নিয়ে বিরোধী দলের চিন্তা আছে। সরকারেরও থাকতে পারে। যদি তারা এ ধারণা গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে দুই দলের সমঝোতাপূর্বক ঘোষণা দেয়া হলে কারো মধ্যে দ্বিধা থাকবে না। এখন আমাদের রূপরেখা দিতে বলা হচ্ছে। বাস্তবতা হলো, আমরা যদি এখন কারো নাম প্রস্তাব করি, তখনই সরকার বলবে তার সঙ্গে বিএনপির এক ধরনের যোগসাজশ আছে। অন্যদিকে সরকার কারো নাম প্রস্তাব করলে আমরাও মনে করব, তার সঙ্গে হয়তো তাদের বোঝাপড়া আছে। এজন্য বলতে চাই, আলোচনার মাধ্যমে রূপরেখা ঠিক করে সংবাদ সম্মেলন করে তা জনসম্মুখে প্রচার করা হোক। আমার মনে হয়, এভাবে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানালে সবাই সেটি গ্রহণ করবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা কি ধরে নেব রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস একেবারেই হারিয়ে ফেলেছে?
হ্যাঁ, বিশ্বাস নাই-ই তো। থাকলে তো সমস্যা এতদূর গড়াত না। জাতিসংঘের মহাসচিবকে টেলিফোন করতে হতো না। এটা আমাদের জন্য সম্মানজনক নয়।
আলোচনায় বসতে হলে এর বিষয় নির্ধারণ করতে হবে। এটি না হলে আলোচনা হবে কী ভাবে?। বসার ব্যবস্থা হলে নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো ও রূপরেখার ব্যাপারে ছাড় দেয়ার প্রশ্ন উঠতে পারে।
এখন বলা হচ্ছে, আমরা সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করতে চাচ্ছি, আসলে তা সঠিক নয়। আমরা সবসময়ই বলছি, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে সন্নিবেশিত করা হোক।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে গেছে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আপনারা কোন দিকে এগোচ্ছেন?
সরকারের বর্তমান যে অবস্থান, বিশেষত সংসদ ও মন্ত্রিসভা বহাল রেখে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে— প্রধানমন্ত্রী এ বক্তব্য রেখেছেন। বস্তুত সেটাই হতে যাচ্ছে বলে আমাদের ধারণা। এটি হলে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব না। এ ব্যাপারেও আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। সে অবস্থায় সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে না।
নির্বাচন সামনে রেখে স্বভাবতই আমরা এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। আমাদের সঙ্গে আরো ১৭টি দল রয়েছে। মহাজোটে ছিল এমন কিছু দলও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষেরও আকাঙ্ক্ষা একই রকম। এ দাবি উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে নির্বাচন করতে যাচ্ছে। এটি তাদের জন্য বুমেরাং হবে। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যে পদক্ষেপ, তাতে আমরা হতাশ।

সুত্র:- দৈনিক বণিক বার্তা /বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ | ৩ আশ্বিন ১৪২০ বঙ্গাব্দ

আরো খবর ➔
বাংলাদেশি কর্মীর সীমা ৪০ শতাংশ করল সৌদি