ডেস্ক : পর্ন ব্যবসার জন্য নাকি নিজে হাতে অভিনেত্রী বেছে নিতেন রাজ কুন্দ্রা। পছন্দসই মনে হলে অনামী মডেল, এমনকি ইউটিউবারদের মতো অপেশাদার অভিনেত্রীদের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ করতেন রাজ। প্রস্তাব দিতেন অডিশন দেওয়ার। প্রাপ্তবয়স্ক ছবির আন্তর্জাতিক চক্রের ‘বড় মাথা’ রাজ গ্রেফতার হওয়ার পর সেই সব বেরিয়ে আসছে।
রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে পর্ন ছবি বা প্রাপ্তবয়স্ক ছবি বানানোর অভিযোগ এনে সোমবার তাঁকে গ্রেফতার করেছে মুম্বই পুলিশ। রাজের গ্রেফতারি নিয়ে বলিউডের একটি বড় অংশ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে কঙ্গনা রানাউত রাজের সমালোচনা করে দাবি করেছেন, বলিউডের ঝকঝকে সোনালি পর্দার পিছনের রূপ আসলে এটাই।
রাখি সবন্ত, গেহনা বশিষ্ঠের মতো অভিনেত্রী অবশ্য রাজের পাশে দাঁড়িয়েছেন। একসময় পর্ন ছবি সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন গেহনাও। তিনি বলেছেন, রাজের অ্যাপে যে প্রাপ্তবয়স্ক ভিডিয়ো থাকে তাকে পর্ন ফিল্মের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। ওগুলিকে বড়জোর যৌন প্রেমের ছবি (ইরোটিক ফিল্ম) বলা যেতে পারে। গায়ক মিকা সিংহও জানিয়েছেন, তিনি শিল্পার স্বামীর অ্যাপে ছবি দেখেছিলেন। তবে তাতে ‘বেশি কিছু’ ছিল না।
যদিও রাজের ‘প্রস্তাব’ পাওয়া পাঁচ মডেল-অভিনেত্রীর বক্তব্য একেবারেই আলাদা। রাজের গ্রেফতারির পর কেউ নিজেদের আড়ালে রেখে কেউ বা প্রকাশ্যেই রাজের সঙ্গে তাঁর ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। কেউ বা প্রকাশ্যে এনেছেন রাজের থেকে প্রস্তাব পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথাও।
পুনীত কউর এই প্রস্তাব প্রাপকদের একজন। ইউটিউবের ভিডিয়ো তৈরি করেন পুনীত। তিনি জানিয়েছেন, রাজের কাছ থেকে অ্যাপের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছিল তাঁর কাছেও। তবে তিনি তা গ্রহণ করেননি। পুনীত নিজের ইনস্টাগ্রামে জানিয়েছেন, রাজ তাঁর অ্যাপ ‘হটশট’-এ অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়ে সরাসরি যোগাযোগ করেছিলেন তাঁর সঙ্গে। ইনস্টাগ্রামে সরাসরি যোগাযোগ করেছিলেন পুনীতের সঙ্গে।
রাজের গ্রেফতারির খবরের স্ক্রিনশট দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমি এ বার নির্ঘাত মরব। এই লোকটা আমাকে সরাসরি মেসেজ পাঠিয়েছিলো!! হটশটে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়ে। আমি ভাবতেই পারছি না, উনি সত্যিই মেয়েদের এ ভাবে লোভ দেখাচ্ছিলেন ওঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য! কি সাঙ্ঘাতিক। জেলে পচে মরো রাজ কুন্দ্রা।’’
রাজের অ্যাপ থেকে তলব পেয়েছিলেন মডেল ইশিকা বোহরাও। রাজের সহকারী উমেশ কামাত এক বছর আগে যোগাযোগ করেছিলেন তাঁর সঙ্গে। নগ্ন দৃশ্যে শ্যুটিংয়ের জন্য প্রতি দিন ৩৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইশিকাকে। তাঁকে বলা হয়েছিল, নগ্ন দৃশ্যের ওই শ্যুটিং হবে ইরোটিক। অর্থাৎ শুধু নগ্নতা নয়, তাতে শিল্পের মিশেল থাকবে। ইশিকা জানিয়েছেন, লকডাউনের জন্য তাঁর হাতে তখন কাজ ছিল না তাই তিনি শ্যুটিংয়ে রাজি হয়ে যান। তবে ইশিকার দাবি, নিজের অ্যাপে ইরোটিক ছবি রাখলেও বিদেশে পূর্ণমাত্রার পর্ন ছবিই বিক্রি করতেন রাজ। শ্যুটিংয়ে গিয়ে তিনি তা বুঝেছিলেন।
ইশিকার কথায়, তাঁকে আর্ট শ্যুটের কথা বলা হলেও শ্যুটিংয়ে তাঁর চার দিকে চারটি ক্যামেরা তাক করা ছিল। এর মধ্যে একটি ছিল লো অ্যাঙ্গেলে অর্থাৎ নীচ থেকে উপরের দিকে ছবি তোলার জন্য নেওয়া। ইশিকার দাবি, তিনি বুঝেছিলেন এ ধরনের ছবি কখনওই আর্ট শ্যুটে ব্যবহার হতে পারে না।
রাজের অ্যাপের বিরুদ্ধে মডেলদের কম টাকায় বেশি কাজ করিয়ে নেওয়ার অভিযোগও এনেছেন ইশিকা। তাঁর দাবি, তাঁকে টানা ২৪ ঘণ্টা কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যেখানে বলিউড এবং মডেলিং দুনিয়াতে এক দিনের কাজের সময় মাত্র আট ঘণ্টার। ইশিকা জানিয়েছেন, তাঁর মতো বহু মডেলকে এ ভাবে এক বেলার টাকায় তিনবেলার কাজ করিয়ে নিতে দেখেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য রাজের অ্যাপে কাজ করেননি তিনি।
মডেল অভিনেত্রী সাগরিকা সোনা সুমনের দাবি, তাঁকে ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের সুযোগ দেবেন বলেছিলেন রাজ। কিন্তু অডিশনে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। ফেব্রুয়ারিতে এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগও জানান তিনি। দাবি, সাগরিকাকে অডিশনে পোশাক খুলে ফেলতে বলা হয়। সাগরিকার কথায়, ‘‘মডেলিংয়ের কাজ করলেও লকডাউনে হাতে কাজ ছিল না। এর মধ্যেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন উমেশ।’’ রাজের সহকারী উমেশ তাঁকে ওয়েবসিরিজে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ভিডিয়ো কলে আচমকাই তাঁকে পোশাক খুলে ফেলতে বলা হয়। উল্টো দিকে ছিলেন রাজ, উমেশ এবং মুখ ঢেকে রাখা এক ব্যক্তি।
শার্লিন চোপড়ার সঙ্গে রীতিমতো চুক্তি করেই কাজে নেমেছিলেন রাজ। মহারাষ্ট্র সাইবার সেলকে শার্লিন জানিয়েছেন, রাজের হাত ধরেই প্রাপ্তবয়স্কদের ছবির জগতে আসেন তিনি। এক একটি ছবিতে কাজ করার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হত শার্লিনকে। শিল্পার স্বামীর অ্যাপের জন্য এমন ১৫-২০টি ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। রাজ তাঁকে তাঁর ছবির লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন শার্লিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কথা রাখেননি। তাই এক বছর পর চুক্তি ভেঙে যায়।
পুনম পাণ্ডে জানিয়েছেন, রাজের সঙ্গে তাঁর অনেক খারাপ অভিজ্ঞতা হলেও শিল্পা শেঠির কথা ভেবেই তিনি এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে চান না। তবে ‘অল্প কথায়’ পুনম যা বলেছেন, তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পুনমের দাবি, হটশটের আগেও প্রাপ্তবয়স্কদের অ্যাপ বানানোর চেষ্টা করেছিলেন রাজ। তিনি আর রাজ একসঙ্গেই নাকি ওই অ্যাপ বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক বিষয়বস্তু থাকবে। কিন্তু টাকার ভাগ বাটোয়ারায় অসঙ্গতি দেখে নাকি চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে যান পুনম।
পুনমের অভিযোগ, তাঁর কিছু ছবি ও ভিডিয়ো রাজের সংস্থার কাছে থেকে গিয়েছিল যা এর পর বিনা অনুমতিতেই প্রকাশ করে দেন রাজের সংস্থা। ২০১৯ সালে এ নিয়ে থানায় মামলাও দায়ের করেছিলেন পুনম। মডেল অভিনেত্রীর দাবি, ওই সব ছবি এবং ভিডিয়োর নীচে তাঁর ফোন নম্বর দিয়ে দেওয়া হত। যার জন্য নম্বর বদলাতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। এমনকি দেশ ছাড়তেও নাকি বাধ্য হন পুনম।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।