দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং সরকার সংস্কারের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের দরিদ্র শ্রেণির জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে চান ইমরান খান। গত বুধবার সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যক ভোট পেয়ে সরকার গঠনের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। কিন্তু ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সংস্কার প্রস্তাব যা ইমরান খান দিয়েছেন তা শুনতে ভালো লাগলেও বাস্তবতা ভিন্ন।
গতকাল সোমবার পিটিআই নেতা আগামী ১১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও এর আগে পিটিআই মুখপাত্র নাইমুল হক সংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ইমরান খান ১৪ আগস্ট শপথ নিতে পারেন। গত রোববার অপর এক ঘোষণায় ইমরান খান বলেছিলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ছোট দলগুলোকে নিয়ে পরবর্তী সরকার গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। ইমরান খান সরকার গঠন করতে পারবেন কি না তা নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে। কারণ দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার জোট (এআরডি) গড়তে যাচ্ছে। এই জোটের সঙ্গে নতুন কোনো পার্টি যুক্ত হলে সরকার গঠনে হুমকির মুখে পড়বে পিটিআই।
ইমরান খান অনেকটা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুকরণে সরকার গঠন করতে চাইছেন। যদিও মোদি বা জিনপিংয়ের মতো শক্তিশালী জনভিত্তি এখনো গড়ে ওঠেনি তার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, সরকার গঠনে প্রশ্নবিদ্ধ নেতৃবৃন্দকে সামনে না আনা ইত্যাদি এজেন্ডা ইতোমধ্যে নিয়েছেন ইমরান খান। কিন্তু এটাও সত্য, পাকিস্তান এক নতুন অর্থনৈতিক সঙ্কটের দিকে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, পাকিস্তানে চলতি অর্থবছরে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি মাত্র ৫ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে দুই মাসের জ্বালানি আমদানি করতে পারবে দেশটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়েছে এবং গত ডিসেম্বর থেকে দেশটির মুদ্রার অবনমন হয়েছে চারবার। এমন অবস্থায় দেশটির ভরসা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। কিন্তু আইএমএফের শর্ত মেনে ইমরান খান ঋণ নিলে তা হবে তার নির্বাচনী ইশতেহারবিরোধী কাজ। পাকিস্তান সরকার এর আগে মোট দশবার আইএমএফ হতে ঋণ সুবিধা নেয়। এমন অবস্থায় নতুন সরকার আইএমএফ থেকে ঋণ নাও নিতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, আজকের পাকিস্তানের রিজার্ভের এই দুরবস্থার পেছনে অনেকটা দায়ী চীন। বেইজিংয়ের নেওয়া ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ পলিসির সঙ্গে পাকিস্তান একাত্মতা ঘোষণার পর থেকেই দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে। বিশেষত দেশটির দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অনেক অনুদান ও প্রকল্প বন্ধ করে দেয়।